খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ ভাদ্র, ১৪৩১ | ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরো তিনজনের মৃত্যু হয়েছে
  চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে শিপইয়ার্ডে জাহাজ কাটার সময় বিস্ফোরণ, দগ্ধ ১২
  নিরবচ্ছিন্নভাবে চলছে সব তৈরি পোশাক কারখানা, কাজে ফিরেছেন পোশাক শ্রমিকরা; শিল্পাঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার

হাসপাতাল থেকে তুলে নেয়া হয় কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কসহ তিনজনকে

গেজেট ডেস্ক

নাহিদ ইসলামসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে গেছেন সাদাপোশাকের এক দল ব্যক্তি। তাঁরা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়েছেন বলে সেখানে উপস্থিত এক সমন্বয়কের স্বজন ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। সূত্র : প্রথম আলো

শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তিনজনকে তুলে নেওয়া হয়। অপর দুই সমন্বয়ক হলেন আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদার। তাঁদেরকে কারা নিয়েছেন বা কোথায় নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য জানা যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তিদের কেউ কেউ নিজেদের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), আবার কেউ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্য পরিচয় দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান রাত সাড়ে আটটার দিকে বলেন, নাহিদ ইসলামসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন সমন্বয়কের কাউকে তাঁরা নেননি। রাত সোয়া ৯টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর পুলিশের অন্য কোনো ইউনিট থেকেও তিন সমন্বয়ককে তুলে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করা হয়নি।

নাহিদ, আসিফ ও আবু বাকের—তিনজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা দাবি আদায়ে সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন (সর্বাত্মক অবরোধ) কর্মসূচি দেওয়ার পর ২০ জুলাই মধ্যরাতে খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়ায় এক বন্ধুর বাসা থেকে নাহিদকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। এক দিন পর পূর্বাচল এলাকায় তাঁকে ফেলে যাওয়া হয়। নাহিদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিল আঘাতের চিহ্ন। এরপর থেকে তিনি এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অপর দুই সমন্বয়ক আসিফ ও বাকেরকেও এর মধ্যে ১৯ জুলাই তুলে নেওয়া হয়েছিল। পাঁচ দিন পর তাঁদের দুজনকে চোখ বাঁধা অবস্থায় যেখান থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল, সেখানে ফেলে যাওয়া হয়। এরপর থেকে আসিফও এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর সঙ্গে থাকছিলেন বাকের।

এই তিনজনকে জোর করে তুলে নেওয়ার খবর পেয়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, নাহিদ হাসপাতালের সপ্তম তলার ৭০৩ নম্বর কক্ষে আর আসিফ তৃতীয় তলার ৩১১ নম্বর কক্ষে ভর্তি ছিলেন। নাহিদের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী আর আসিফের সঙ্গে বাকের ছিলেন। ওই ব্যক্তিরা প্রথমে নাহিদের কক্ষে গিয়ে তাঁকে নিয়ে যান। এ সময় নাহিদের স্ত্রী ঘুমিয়ে ছিলেন। পরে তাঁরা তিনতলায় আসিফের কক্ষে গিয়ে তাঁকে ও বাকেরকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান। এ সময় তাঁদের সঙ্গে হাসপাতালের এক কর্মচারীকেও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।

নাহিদকে তুলে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তাঁর স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি এখন ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর সঙ্গে আছেন ফাতিমা তাসনীম নামের এক নারী। নাহিদ ইসলামের বোন পরিচয় দেওয়া এই নারী প্রথম আলোকে বলেন, বিকেলে তিনি নাহিদের কক্ষেই ছিলেন। হাসপাতালের যে ছেলেটি খাবার দিত, তাকে আটক করা হয়েছে, এমন খবর শুনে তিনি নাহিদের কক্ষ থেকে আসিফের কক্ষে আসেন।

ফাতিমা তাসনীম বলেন, ‘এসে দেখি চারজন ব্যক্তি তাদের ধমকাচ্ছেন ও মারমুখী আচরণ করছেন। আসিফ ও বাকের থরথর করে কাঁপছিল এবং বলছিল “আমরা যাব না”। তারা লুঙ্গি পরা অবস্থায় আসিফ ও বাকেরকে জোর করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। আসিফ ও বাকের অনুরোধ করলে প্যান্ট পরার সুযোগ দেওয়া হয়। এ সময় ওই ব্যক্তিরা আমাকে বলেন, “আপনাকে চেনা চেনা লাগছে; আপনি আন্দোলনকারী না?” পরিচয় দিলে তাঁদের একজন বলেন, “আপনার ব্যাপারটাও দেখছি।” এরপর আসিফ ও বাকেরকে নিয়ে যাওয়ার জন্য টানাহেঁচড়া শুরু করলে আমি ও হাসপাতালের নার্সরা তাঁদের বলি, রোগীদের ডিসচার্জ করা হয়নি। তখন ওই ব্যক্তিরা নার্সদের ইনচার্জকে বলেন, “আপনারা চেনেন? কাউন্টার টেররিজম সম্পর্কে আপনাদের ধারণা আছে?” এরপর কোনো কথা না শুনে তাঁরা দুজনকে নিচে নিয়ে যান। এ সময় তাঁরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলেন, তাঁদেরকে (তিন সমন্বয়ক) অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। আসিফ ও বাকেরের মুঠোফোনও নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’ ফাতিমা তাসনীম বলেন, ওই দুজনকে নেওয়ার পরে জানতে পারেন নাহিদকেও তাঁর কক্ষ থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। নাহিদের সঙ্গে থাকা দুটি মুঠোফোন ও তাঁর স্ত্রীর মুঠোফোনও ওই ব্যক্তিরা নিয়ে গেছেন।

ঘটনার বিষয়ে আসিফ মাহমুদের চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বলেন, আজ সকাল সাতটার দিকে হাসপাতালে এসে আসিফ মাহমুদের কক্ষের সামনে গিয়ে অপরিচিত তিনজন মানুষকে দেখতে পান। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষও বাড়তে থাকে। ওই ব্যক্তিদের কেউ কেউ তাঁর পরিচয় জানতে চান।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ডিবি ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কয়েকজন এসে আসিফকে তাঁদের সঙ্গে যেতে বলেন জানিয়ে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘আমাকেও তাঁরা সরে যেতে বলেন। কিন্তু রোগীর প্রতি দায়িত্বের জায়গা থেকে সরিনি। তাঁরা রোগীকে অন্য হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলছিলেন। আমি তাঁদের বলি, ডিসচার্জ না করে কোনো রোগীকে আমরা ছাড়তে পারি না। আসিফের শারীরিক অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে তিনি ডিসচার্জের উপযোগী ছিলেন না। তাঁর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও কিছু একটা ইনজেক্ট করা হয়েছিল। তিনি হাসপাতাল থেকে যেতে চাননি। আমরাও ছাড়তে চাইনি। কিন্তু তাঁদের চাপাচাপির কারণে বাধ্য হয়ে তাঁকে ডিসচার্জ অন রিস্ক বন্ড করতে হয়।’

চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা হাসপাতালের একজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক  বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর্মীরা আমাকে জানান যে কাউন্টার টেররিজমের কর্মকর্তারা এসেছেন রোগী আসিফ মাহমুদকে নিয়ে যেতে। রোগী যেতে চাইছিলেন না, আমরাও ছাড়তে চাইনি। তাঁদের জোর করেই নিয়ে যাওয়া হয়।’

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!